আসুরিক শৈব-শাক্ত

আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তি

#বর্তমানে ভন্ড আর্য এবং ভন্ড শৈব-শাক্ত, এই তিন মতালম্বীদের মধ্যে অধিকাংশই আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তি লক্ষ্য করা যায়। এসকল অসুরগণ সর্বদা কিভাবে শ্রীকৃষ্ণকে নিন্দা করা যাবে এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তকে বিদ্বেষ করার বিভিন্ন পদ্ধতি তৈরী করে। অসুর শ্রেণীভুক্ত এসকল ভন্ড শৈব-শাক্ত ও আর্যদের সম্মুখে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর বললেই তাদের গাত্রদহন হতে থাকে। তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে শ্রীকৃষ্ণের ও তার ভক্তদের নিন্দা করে। অসুরের ভাই অসুরই হয়, জানা কথা। সেইরুপ ভন্ড আর্যদেরকে ভন্ড শৈবরা ভাই করে নিয়েছে। যাইহোক, অসুরদের মনে কখনও ভগবদ্ভক্তি জাগ্রত হয় না।

#ভগবান গীতায় বলেছেন,
       “ন মাং দুষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ।
মায়য়াপহৃতজ্ঞানা আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ।। (গীতা-৭.১৫)
       অর্থঃ মুঢ়, নরাধম, মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবাপন্ন, সেই সমস্ত দুষ্কৃতকারীরা কখনও আমার শরণাগত হয় না।

       #এরুপ ভগবদ্বিদ্বেষী অসুরগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণে প্রপত্তি করে না। রাবণ, হিরণ্যকশিপু, জরাসন্ধ, কংস প্রভৃতি নৃপতিগণ বহু বিদ্যাবুদ্ধি ও তপস্যার প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েও যেহেতু ভগবান শ্রীরামচন্দ্র, ভগবান শ্রীনারায়ণ ও ভগবান শ্রীবিষ্ণু বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হিংসা করেছিলেন। সেই কারণে তারা ‘অসুর’ বলে সমাজে পরিচিত। অসুরগণ সাধারণত বিদ্যা-বুদ্ধিতে বড় কম ‘ডাক্তার’ নয়। কিন্তু যেহেতু সেই সকল ‘ডাক্তার’গণ অসুর ভাবাপন্ন বা কৃষ্ণ বিদ্বেষী সেইজন্য তাদের বিদ্যা-বুদ্ধির চরম ফলপ্রাপ্তি ঘটে না। অর্থ্যাৎ সেই সকল বিদ্যা-বুদ্ধি মায়াকবলিত হয়ে অপহৃত জ্ঞান হয়ে যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণে প্রপত্তি না করলে ‘দূরত্যয়া মায়া’র হাত হতে কখনই পরিত্রান লাভ হয়না।

       #অসুরগণের প্রধান কাজই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণকে এবং কৃষ্ণভক্তকে বিদ্বেষ করা। তারা মনে করে, শ্রীরামচন্দ্র তো মানুষই ছিল এবং শ্রীকৃষ্ণও সেই প্রকার আর একজন মানুষ ছিল। সুতরাং শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ যদি মানুষ হয় তাহলে তারাই বা কম কিসে। তারা মনে করে, আমরা বিদ্যা ও বুদ্ধিতে শ্রীরাম বা শ্রীকৃষ্ণ অপেক্ষা কিছু কম নাকি? মহাবদান্যাবতার শ্রীগৌরসুন্দরের উপর নাস্তিক পড়ুয়াগণ এই প্রকার মনুষ্য বুদ্ধি করে প্রভুকে সন্যাস আশ্রমের কঠোরতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছিল। অসুরগণ এইভাবে চিরদিন ভগবানকে মানুষ ভাবে। সেই প্রকার মুঢ়গণের সম্বন্ধেও ভগবদ্গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে,
       — “অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম।
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম।। (গীতা-৯.১১)
        অর্থ্যাৎ, আমি যখন মনুষ্যরুপে অবতীর্ণ হই তখন
মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে। তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।

       #সুতরাং এমন মনোভাব অসুরগণের পক্ষে স্বাভাবিক। অসুরগণের বিদ্যা বুদ্ধির উপাধিগুলো বিষধর সাপের মাথায় বহুমূল্য মণির মতো। সাপের মাথাতে মণি দ্বারা শোভিত থাকলেও, সে তেমনি ভয়ংকরই থাকে। সেইপ্রকার অসুরগণের বিদ্যা-বুদ্ধি, উপাধিগুলোও তাকে কম ভয়ংকর করে না। মরা মানুষকে বহুমূল্য পোশাক-পরিচ্ছদে সাজিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে শ্মশানঘাটে নিয়ে যাওয়া যেমন একটা লোকরঞ্জন, সেইপ্রকার ভগবদ্বিদ্বেষী নাস্তিক অসুর স্বভাব-বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে কেবল নামমাত্র বিদ্যা শিক্ষার উপাধি দ্বারা ভূষিত করা একটা বিশিষ্ট লোক প্রবঞ্চনা কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।

        #ভন্ড আর্য শ্রেণীর দুষ্কৃতকারীদের বলা হয় “আসুরং ভাবমাশ্রিতা” অর্থ্যাৎ অাসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তি। এইধরণের মানুষেরা নির্লজ্জভাবে নাস্তিক। এই শ্রেণীর নররুপীধারী অসুরেরা তর্ক করে যে, পরমেশ্বর ভগবান কখনই এই জড় জগতে অবতরণ করতে পারেন না। কিন্তু ভগবান যে কেন এই জড় জগতে অবতরণ করতে পারেন না, সেই সম্বন্ধে তারা কোনও যুক্তিও প্রদর্শন করতে পারেনা। এদের কেউ কেউ আবার বলে যে, ভগবান নির্বিশেষ ব্রহ্মের অধীন, যদিও গীতাতে ঠিক এর বিপরীত কথাই বলা হয়েছে। পরম পুরুষোত্তম ভগবানের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়েই সমস্ত নাস্তিকেরা স্বকল্পিত অপ্রামাণিক একাধিক অবতারদের অবতরণা করে। এই ধরণের মানুষদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ভগবানের নিন্দা করা, তাই তারা কখনই শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দের শরণাগত হতে পারে না।

জয় শ্রীকৃষ্ণ
সংগ্রহ: গীতার রহস্য

মন্তব্যসমূহ

  1. এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পরম বৈষ্ণব শিব

বেশধারী শৈব (পর্ব ২)

অভিশপ্ত শৈব